প্রকল্প ব্যয় ৩৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি, ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও সমীক্ষা শেষ করতে সময় লাগবে ৩৬ মাস
নিউজ ডেস্ক ::
মহেশখালীতে ৩৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে, যা থেকে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করবে আমেরিকান কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই), সুইজারল্যান্ড শাখা। গতকাল কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি। এর আগে গত বছর পটুয়াখালীর পায়রায় এলএনজিভিত্তিক আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। ওই কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতাও ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
মহেশখালীতে নতুন প্রকল্পটিতে ভূমি উন্নয়ন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে চার দশমিক চার বিলিয়ন (৪৪০ কোটি) ডলার; যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদ্যুৎ ভবনে পিডিবির পক্ষে চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ এবং জিএই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাসেল স্টোকস সমঝোতা স্মারকে(এমওইউ) সই করেন। এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৬০০ একর ভূমি উন্নয়নে ১৬০ কোটি ডলার এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২৮০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী বলেন, পরিত্যক্ত গ্যাস কূপগুলোতে কিভাবে এলএনজি রাখা যায়, কিভাবে প্রযুক্তি ও প্রকৌশল উন্নত করা যায়, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দরকার। উপদেষ্টা বলেন,কেবল এলএনজি নয়, কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোও এগিয়ে নিতে হবে। কেননা গ্রাহকের কাছে মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছে। জিই এর সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব সরকারের লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এটি সরাসরি সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ আমেরিকার।
জেনারেল ইলেকট্রিক পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে একই দিন বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানি সামিট করপোরেশন ও জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশনের সঙ্গে মিলে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। পিডিবির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জিএই পাওয়ারের প্রেসিডেন্ট রাসেল স্টোকস বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে অবদান রাখতে পেরে তারা আনন্দিত। মহেশখালীতে এই বিনিয়োগ প্রকল্পের আওতায় জিইর প্রধান পণ্য ৯এইচএ গ্যাস টারবাইন ব্যবহার করে ৬০০ মেগাওয়াট করে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি ইউনিট, মোট তিন লাখ ৮০ হাজার মিটার গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতার দুটি এলএনজি টার্মিনাল, এক লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি তেলের টার্মিনাল ও ৩০০ মেগাওয়াটের একটি এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে টারবাইনসহ ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসা জেনারেল ইলেকট্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইক্যুইটি বিনিয়োগে যাচ্ছে। এর আগে ছোট্ট পরিসরে বিনিয়োগ করলেও বুধবারের সমঝোতাগুলোতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
পিডিবির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জিইর সঙ্গে পিডিবি একটি যৌথমূলধনী কোম্পানি গঠন করবে। ওই প্রকল্পের ৫১ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে পিডিবির, ৩০ শতাংশ থাকবে জেনারেল ইলেকট্রিক সুইজারল্যান্ড শাখার এবং বাকি ১৯ ভাগ শেয়ার পিডিবি ও জিইর মধ্যে সমাঝোতার ভিত্তিতে কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে। এছাড়া গঠিত জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই, ৫ হাজার ৬০০ একর ভূমি উন্নয়ন ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে। পাশাপাশি সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী পিডিবি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানির সঙ্গে ভূমি ইজারা চুক্তি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করবে। অন্যদিকে জিই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, পাওয়ার প্লান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিজাইন ও এই কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করবে। এই কেন্দ্রে ১২শ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি ইউনিট নির্মাণ হবে। এতে খরচ হবে চার দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও সমীক্ষা শেষ করতে ৩৬ মাস সময় লাগবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকার্ট বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক এই সমঝোতার মাধ্যমে আরো জোরালো হবে। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা করেছে সরকার। এর মধ্যে গ্যাস, এলএনজি, কয়লাসহ নানা জ্বালানি রয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, এ লক্ষ্যে ১৫ হাজার ২০৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ করা হচ্ছে, ৪ হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে এবং ২২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ২০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত: